Monday 10 March 2014

ভাললাগা গল্প (মোবাইল ভার্শন): মত্স্য পুরাণ (বনফুল)

ছেলেবেলার ভাললাগা গল্প
মৎস্যপুরাণ
বনফুল
খুকুর বিয়ের গল্প, সে এক অদ্ভুত গল্প। বললে কেউ বিশ্বাস করে না। তোমাদেরও বলছি, দেখ তোমরা বিশ্বাস করতে পার কি না। খুকুর ভাল নাম মানকুমারী। মানের মরাই একটি, নামের মর্যাদা ও রেখেছে। কথায় কথায় ঠোট ফুলে ওঠে, নাকের ডগা কাঁপতে থাকে, তারপর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। এখন তার বয়স ষোল, এখনও অমনি।
তার এই আশ্চর্য বিয়ের গল্প বলতে হলে শুরু করতে হবে তার ছেলেবেলা থেকে। যখন তার বয়স তিন কি চার তখন তার মাসী তাকে একটি বড় পুতুল উপহার দিয়েছিল তার জন্মদিনে। বেশ বড় পুতুল, যেন বড়সড় খোকা একটি। নীল চোখ, মাথার চুল চমংকার কোঁকড়ানো, ঠোট দুটি টুকটুকে লাল, আর কি মিষ্টি হাসি তাতে। খুকু পুতুলটিকে দিনের বেলা তো কাছছাড়া করতই না, রাত্রেও কাছে নিয়ে শুত। কিন্তু এক আপদ জুটল দিন কয়েক পরে, ফন্‌তি মাসীর বায়নাদার মেয়ে মনু। ভালো নাম মনোরমা, কিন্তু ওই নামেই মনোরমা, কাজের বেলায় ঠিক উলটো। একবার গলা ছেড়ে কাঁদতে আরম্ভ করলে আর রক্ষে নেই, কাদছে তো কাঁদছেই, বাড়িতে কাক–চিল বসার উপায় নেই। লোকেদের প্রানান্ত হবার উপক্রম। আর কথায় কথায় বায়না, এটা চাই, ওটা চাই। এই মেয়েকে নিয়ে ফন্‌তি মাসী এল শরীর সারতে। খুকু জানত না তখন যে মনুটি কিচিজ’, তাহলে কি আর তাকে পুতুল দেখায়? আগেই লুকিয়ে ফেলত। কিন্তু তা হল না। মনু আসতেই খুকু এক মুখ হেসে এগিয়ে গিয়ে বলে ‘আমার পুতুল দেখ। চল একে নিয়ে খেলি গিয়ে। একে আজ বর সাজাই আয়। পাশের বাড়িতে মানতুর খুকিপুতুল আছে তার সঙ্গে বিয়ে দেব। মানতুর বাড়ি যাবি?‘
মনু কিন্তু লুব্ধদৃষ্টিতে চেয়ে ছিল পুতুলটার দিকে। কিছু না বলে ঘাড় বেঁকিয়ে চেয়েই রইল মিনিটখানেক। তারপর বলল, ‘ও পুতুল তোমার নয়, আমার—‘
ইস্ তোমার বই কি। মাসী আমাকে জন্মদিনে কিনে দিয়েছে।‘
যুক্তি মানবার মেয়ে মনু নয়। সে আরও খানিকক্ষণ পুতুলটার দিকে তির্যক দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে লাফিয়ে এগিয়ে গেল খুকুর দিকে, ছোঁ মেরে পুতুলটা কেড়ে নিয়ে বললে—“আমার পুতুল-তোমার নয়। আমার--"
এ রকম জবরদস্তি সহ্য করা শক্ত। খুকু এক ধাক্কায় মনুকে ধরাশায়ী করে কেড়ে নিলে পুতুলটা। তারপরই শুরু হল মনুর আকাশ ফাটানো চিৎকার। 
হাঁ হাঁ করে বাড়ির সবাই ছুটে এল। কুটুমের মেয়ে। দুদিনের জন্য বেড়াতে এসেছে। কি হল তার? খুকু এক ছুটে আগেই চলে গিয়েছিল চিলে–কোঠার ঘরটায়। সেখানে শ্রীমন্ত মালীর খোলা কাঠের বাক্সোটাতে লুকিয়ে ফেলেছে পুতুলটাকে। যখন জানা গেল সামান্য একটা পুতুলের জন্য এই কাণ্ড তখন খুকুর মা বললেন কেঁদ না মনু লক্ষীটি তোমাকেও আনিয়ে দিচ্ছি ঠিক অমনি একটা পুতুল। 
পুরীর সমস্ত দোকান খুঁজেও কিন্তু ঠিক অত বড় দ্বিতীয় পুতুল আর পাওয়া গেল না। মনু ছোট পুতুল নেবে না, ঠিক অত বড় পুতুলই চাই। কিছুতেই কান্না থামে না তার। খুকুর মা শেষে খুকুকে বললেন, ‘দিয়ে দাও তোমার পুতুলটা মনুকে। তোমার ছোট বোন হয় কলকাতা থেকে তোমাকে আনিয়ে দেব একটা পুতুল। এখন ওটা দিয়ে দাও ওকে, ছোট বোনকে কি কাঁদাতে আছে?
মায়ের কণ্ঠস্বরে আদেশের আমেজ পেয়ে খুকু আর আপত্তি করতে সাহস করলে না। দিয়ে দিলে পুতুলটা। কিন্তু বুক ফেটে গেল তার। মালী শ্ৰীমন্তের কাছে গিয়ে দুঃখে ভেঙে পড়ল একবারে। বৃদ্ধ শ্ৰীমন্ত মালীই তার মনের কথা বোঝে, বিপদে আপদে আশ্রয় দেয়, প্রশ্রয় দেয় ও নানাভাবে। কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছে কিনা, তাই যত আবদার তার কাছেই। সে ওড়িয়া ভাষায় তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললে, এতে কাঁদবার কি আছে। ওর চেয়ে ঢের ভালো পুতুল তাকে সে এনে দেবে। যদি এনে দিতে না পারে নিজের নাক কেটে ফেলবে সে, শুধু তাই নয় নিজের নামও বদলে ফেলবে। শ্ৰীমন্তের মুখে এমন সব কঠোর প্রতিজ্ঞা শুনে খুকুর আশা হল। আজ পর্যন্ত শ্ৰীমন্তর কথার খেলাপ হয় নি। এই সেদিনও সে তাকে একটি পাকা চালতা এনে দিয়েছে লুকিয়ে।
মাসখানেক পরেই মনুরা চলে গেল। বলা বাহুল্য, পুতুলটা নিয়েই গেল সে। পুরীর বাজারে আর তেমন পুতুল একটিও এল না। মামাবাবু কোলকাতা থেকে জানালেন সেলুলয়েডের বড় পুতুল আজকাল পাওয়া যাচ্ছে না আর। শ্ৰীমন্ত চেষ্টার ত্রুটি করছিল না অবশ্য। এদিক সেদিক থেকে প্রায়ই সে পুতুল জোগাড় করে আনত। কখনও ন্যাকড়ার পুতুল, কখনও মাটির পুতুল, কখনও রবারের পুতুল। গালার পুতুলও এনেছিল একদিন। কিন্তু খুকুর একটাও পছন্দ হয় নি। শ্ৰীমন্ত কিন্তু নিজের নাক কাটবার জন্য বা নাম বদলে ফেলবার জন্য ব্যস্ত হল না। সে ক্রমাগত খুকুকে আশ্বাস দিয়ে যেতে লাগল যে ওর চেয়েও ভালো পুতুল সে খুকুকে এনে দেবেই দেবে। দিলেও একদিন। ভারি আশ্চর্য্যজনক ঘটনা ঘটল একটা।
একদিন সকালে শ্ৰীমন্ত খুকুকে হাতছানি দিয়ে ডেকে আস্তে আস্তে বলল, ‘তোর পুতুল এনেছি খুকু, জীয়ন্ত পুতুল।’
কোথায়?
বাগানের পিছনে যে চৌবাচ্চাটা আছে, তার ভিতরে।
চৌবাচ্চার ভিতরে পুতুল রাখতে গেলে! কি বুদ্ধি তোমার শ্রীমন্তদা!
দেখেই যা না আগে—
খুকু গিয়ে সত্যই অবাক হয়ে গেল।
এক চৌবাচ্চা জলের ভিতর সত্যিই একটা জীবন্ত পুতুল সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে। কাছে গিয়ে আরও অবাক হয়ে গেল সে। পুতুলের উপরটা মানুষের মতো, কিন্তু কোমর থেকে নীচে পর্যন্ত মাছ। মাছের প্রতিটি আঁশ যেন রূপোর তৈরি আর তার থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে রামধনুর সাতটি রং। মাছের ল্যাজের পাখনাগুলোও অপরূপ, ঠিক যেন মখমলের তৈরি।
শ্ৰীমন্ত বললে, আমার এক জেলে বন্ধু আছে, সে সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। কাল তারই জলে ধরা পড়েছে এটি। আমি তার কাছ থেকে দশ টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছি। চিড়িয়াখানায় বিক্রি করলে আরও বেশী টাকা পেত সে। বন্ধু বলে আমাকে দশ টাকায় দিয়েছে।
খুকু অবাক্ হয়ে গেল।
খবর চাপা রইল না। দলে দলে লোক দেখতে এল মৎস্যনারীকে। খুকুর কিন্তু আশ্চৰ্য্য লাগল, নারী কি নর, তা এরা ঠিক করছে কি করে! কিচ্ছু তো বোঝা যাচ্ছে না। মাথার চুলগুলো একটু লম্বা কিন্তু ছেলেদেরও লম্বা চুল হয় না কি? ওই তো মাখনবাবুর ছেলে বুলু, লম্বা লম্বা চুল তার, মঙ্গলচণ্ডীর কাছে মানত করা আছে। পুরুষ কি মেয়ে যাই হোক সুন্দর দেখতে কিন্তুধপধপে ফরসা গায়ের রং, টানা-টানা চোখ, মিশকালো চোখের তারা, পাতলা ঠোট দুটি টুকটুক করছে। খুকু এগিয়ে যায় তার সঙ্গে ভাব করতে, সে-ও এগিয়ে আসে কিন্তু কথা বলতে পারে না।
তোমার নাম কিখুকু জিগ্যেস করে।
চুপ করে চেয়ে থাকে সে, উত্তর দিতে পারে না। খুকুর মাঝে মাঝে মনে হয় তার চোখ দুটো যেন হাসছে। লজেনস, বিস্কুট, সন্দেশ, রসগােল্লা, আচার নিয়ে খুকু রোজ তাকে সাধাসিধে করে, সে কিন্তু স্পর্শ পৰ্য্যন্ত করে না কিছু। শ্ৰীমন্ত বললে, ও সমুদ্রের ছোট ছোট মাছ খায়, আমি রোজ সকালে এনে দি। শ্ৰীমন্ত আর একটা কাজও করে। সমুদ্র থেকে জল এনে চৌবাচ্চাটার জল বদলে দেয় রোজ। সমুদ্রের প্রাণী কি না, কুয়োর জল সহ্য হবে না হয়তো।
দেখতে দেখতে অনেক দিন কেটে গেল।
মৎস্যনারীর সঙ্গে বেশ ভাব হয়ে গেল খুকুর। মানুষের খাবারও খেতে লাগল সে ক্রমশঃ। বিস্কুট, মাছভাজা, টোস্ট, ওমলেটখুকু তাকে রোজ খাওয়াতো। মনে হতে লাগল কথা বলবারও যেন চেষ্টা করছে, কু–কু বলত মাঝে মাঝে। খুকুর কি আনন্দ! প্রথম ভাগ এনে পড়াতেই শুরু করে দিল তাকে। মনে হত সেও যেন পড়ার চেষ্টা করছে। খুকু স্কুলে যেত না। একজন মাস্টারমশায় তাকে বাড়িতে পড়িয়ে যেতেন। খুকুর জেদাজেদিতে মৎস্যনারীকেও তিনি পড়াবার চেষ্টা করতে লাগলেন। তাঁরও মনে হল, চেষ্টা করলে ওকে হয়তো কিছু শেখান যাবে। খুকুর বাবা-মা কৌতুক অনুভব করলেন এতে, মাস্টার মশাইকে বললেন, দেখুন না, ওকে কথা কওয়াতে পারেন যদি। তাহলে খুকুর বেশ সঙ্গী হয় একটি। মাস্টার মশাই চেষ্টা করতে লাগলেন। আর খুকুর তো কথাই নেই, সে যেন মেতে উঠল। সমস্তক্ষণই সে ওকে নিয়ে থাকত। অনেক বকাবকি করে তবে তাকে খেতে বা শুতে নিয়ে যাওয়া হত।
মৎস্যনারী ক্রমশঃ কথা কইতে শিখল, লেখাপড়াও শিখতে লাগল।
তারপর প্রায় দশ বৎসর কেটে গেছে। অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। এখন খুকুর বয়স ষোল। মংস্যনারীও বড় হয়েছে বেশ। তার জন্যে আরও বড় চৌবাচ্চা করানো হয়েছে, আর সেই চৌবাচ্চা ঘিরে হয়েছে কাচের প্রকাণ্ড ঘর। আর একটা বিস্ময়জনক ঘটনাও ঘটেছে‚ যা চমকে দিয়েছে সকলকে। মৎস্যনারী আর নারী নেই, সে রূপান্তরিত হয়েছে নরে। তার গোঁফ উঠেছে। চমৎকার বাংলা কথা বলতে পারে সে, বাংলা ইংরেজী দুই পড়তে পারে, অঙ্ক কষতে পারে, এমন কি আলজেব্রার অঙ্কও। চৌবাচ্চার ধারে প্রকাণ্ড টেবিলে, টেবিলের উপর বইয়ের শেলফ। এখন রীতিমত ছাত্র সে। মাস্টার মশাই বলেন খুকুর চেয়ে, ওরই নাকি পড়ায় বেশী মন।
একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে কিন্তু। খুকুর বিয়ে নিয়ে হয়েছে মুশকিল। খুকু বলছে সমুদ্রগুপ্তকে ছেড়ে আমি থাকতে পারব না। মাস্টার মশাই ওর নাম দিয়েছেন সমুদ্রগুপ্ত। সমুদ্রগুপ্তকে সমুদ্রের ধার ছাড়া অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া চলবে না, কারণ সমুদ্রের জল না পেলে ও বাঁচবে না। অথচ সমুদ্রের ধারে যে সব শহর বা গ্রাম আছে তাতে খুকুর যোগ্য কোনও পাত্র পাওয়া যাচ্ছে না। খুকুর বাবা ওয়ালটেয়ার, মাদ্রাজ পৰ্য্যন্ত খোঁজ করে দেখেছেন।
শেষে তারা ঠিক করলেন জোর করেই খুকুর অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে হবে। পাটনায় খুব ভালো পাত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ পাত্র হাতছাড়া করা উচিত নয়। খুকু না হয় মাঝে মাঝে সমুদ্রগুপ্তকে এসে দেখে যাবে। একটা পোষা জানোয়ারের জন্য সমস্ত জীবনটাকে নষ্ট করার মনে হয় কোনও? সমুদ্রগুপ্তকে অবশ্য সামান্য একটা জানোয়ার বলে মনে করতে কষ্ট হচ্ছিল খুকুর বাবা–মার। রাজপুত্রের মতো চেহারা কি বুদ্ধি কি কথাবার্তা!
খুকুর মা বললেন, ‘আহা, ওর নীচের দিকটা যদি মাছের মতো না হত তাহলে ওর সঙ্গেই খুকুর বিয়ে দিতাম। খুকুই তো আমাদের একমাত্র সন্তান, জামাইও ঘরে থাকত তাহলে।‘
খুকুর বাবা বললেন, “যা হবার নয় তা ভাবছ কেন?
বিয়ের কথাবার্তা চলতে লাগল। একদিন খুকু শুনল তাকে দেখবার জন্য পাটনা থেকে পাত্রের বাবা আসছে।
গভীর রাত্রি।
সমুদ্রগুপ্তের ঘরে বসে খুকু কঁদছিল। সমুদ্রগুপ্ত খুকুকে কখনও কাঁদতে দেখে নি। খুবই আশ্চর্য হয়ে গেল সে।
ও কি করছ তুমি?
খুকু চোখের জল মুছে ফেললে।
কি করছিলে?
কাঁদছিলাম।
কাঁদছিলে? কেন! বইতে পড়েছি লোকে দুঃখ হলে কাঁদে। কী দুঃখ হয়েছে তোমার?
তোমাকে ছেড়ে এইবার চলে যেতে হবে।
সে কি! কোথায় যাবে?
শ্বশুরবাড়ি। আমার বিয়ের সব ঠিক হয়ে গেছে। পরশু আমাকে ওরা দেখতে আসবে
সমুদ্রগুপ্ত নিৰ্ব্বাক হয়ে রইল খানিকক্ষণ।
আমাকেও নিয়ে চল তোমার সঙ্গে।
পাটনায় তুমি থাকবে কেমন করে? তোমার চৌবাচ্চায় সমুদ্রের জল চাই। সেখানে তো সমুদ্র নেই। তোমার মাছের অংশটা যদি না থাকত তাহলে কোন ভাবনাই ছিল না
তারপর একটু থেমে খুকু বললে‚ ‘মা কাল কি বলছিল জান? বলছিল সমুদ্রগুপ্তের নীচের দিকটা যদি মাছের মতো না হত তাহলে ওর সঙ্গেই খুকুর বিয়ে দিতাম।’
‘তাই না কি?’ সমূদ্রগুপ্তের সমস্ত মুখটা বিবর্ণ হয়ে গেল। তার যে অংশটুকু মাছের মতাে সেটা জলের ভিতর নিস্পন্দ হয়ে গেল হঠাৎ!
তার পরদিন খুব ভোরে খুকুর ঘুম ভেঙে গেল হঠাৎ। শুনতে পেলে সমুদ্রগুপ্ত খুব জোরে জোরে তার নাম ধরে ডাকছে। বিছানা থেকে তাড়াতাড়ি নেবে সে ছুটে চলে গেল সমুদ্রগুপ্তের ঘরে।
‘খুকু দেখ দেখ, আমার মাছের খোলসটা ফেটে গেছে। আমি একা হাত দিয়ে ওটা ছাড়াতে পারছি না, তুমি একটু সাহায্য করো। আমি বুঝতে পারছি ওই খোলসটার ভিতর আমার পা আছে। একটু টানো মাছের খোলসটা  খুলে যাবে এখুনি।’
খুকু বিস্ময়–বিষ্ফারিত নেত্রে চেয়ে রইল। সত্যিই ফেটে গেছে খোলসটা।
‘দাঁড়াও, আগে বাবার হাফপ্যান্টটা নিয়ে আসি তাহলে–
ছুটে চলে গেল খুকু এবং ঊর্ধ্বশ্বাসে ফিরে এল একটা হাফপ্যান্ট হাতে করে।
আধঘণ্টা পরে খুকুর বাবা–মাও অবাক হয়ে গেলেন হাফপ্যান্ট পরা সমুদ্রগুপ্তকে দেখে। এ কী কাণ্ড!
পাটনায় তখখুনি তার চলে গেল, পাত্রের বাবার আর আসবার দরকার নেই। খুকুর বাবা পুরোহিত মশাইকে খবর দিতে বেরিয়ে গেলেন। খুকুর মা গেলেন লুচি ভাজতে।
খুকু জিগ্যেস করলে—‘আমার ভারি আশ্চৰ্য্য লাগছে। কি করে তুমি বেরুলে?’
সমুদ্রগুপ্ত বললে ইতিহাসের সমুদ্রগুপ্ত কত অসাধ্য–সাধন করেছিলেন, আর আমি এটুকু পারব না? চেষ্টায় কি না হয়। আমি তোমার কথা শুনে কাল সমস্ত রাত ধরে বেরুতে চেষ্টা করেছি। ভোরের দিকে ফেটে গেল খোলসটা—’
সাতদিন পরে খুকুর বিয়ে হয়ে গেল সমুদ্রগুপ্তের সঙ্গে। বরকর্তা হল শ্ৰীমন্ত।

ছবি: বলাইবন্ধু রায় (সৌজন্য: পূজা বার্ষিকী– জয়যাত্রা)

No comments:

Post a Comment